সবিতাভাবি ও নারীর যৌনতার ব্যবহার্যতা

সবিতা ভাবি একটি উত্তরভারতীয় পর্ণ চরিত্র। চরিত্রটির বিকাশ ও বিস্তার ঘটেছিল কার্টুনচিত্রের মাধ্যমে। শ্যামা স্থূলাঙ্গী, পীনপয়োধরা, বিবাহিতা ভাবি রূপে তাকে পাওয়া গিয়েছিল। আর সঙ্গে সঙ্গে গৃহীত হয়েছিল সে জনমানসে। পড়ুন পুরুষমানসে। বিবাহিত স্ত্রীলোক, কিন্তু স্বামীর দ্বারা উপেক্ষিতা। বা স্বামী কাজে ব্যস্ত, অন্যমনস্ক, কিম্পুরুষ, উদাসীন যা খুশি। এক্ষেত্রে অশোক নামের এই স্বামীটি উহ্য। সবিতাভাবি সচরাচর তরুণতর দেবরদের সঙ্গে যৌন খেলায় অংশ নেন। তিনি নিম্ফোম্যানিয়াক , পুরুষ পেলেই মাথা চিবিয়ে খান ইত্যাদি ইত্যাদি। 

এই কার্টুন নিয়ে বেশ হৈ চৈ হয়। ২০১০ থেকে কিছুদিন এইসব চলে। তারপর নানা আপত্তিতে বন্ধ হয়ে যায়। এই বে-আইনি ঘোষণা বা ব্যান নিয়ে নানা রকম আলোচনা উঠে আসে জনমানসে। এ বিষয়ে উল্লেখ্য এই , যে, যে কোন রকম পর্নোগ্রাফিই নিষিদ্ধ ভারতে, কাজেই এ নতুন কিছু নয়। তবে ইন্টারনেট মাধ্যমে নিষেধকে বলবৎ করা খুব কঠিন নিঃসন্দেহে। 

  আসল ওয়েবসাইটটি ভারত সরকার অশ্লীলতা বিরোধী আইনে সেন্সর করেছিল। বিশিষ্ট ভারতীয় লিবার্টিয়ান ব্লগার এবং সাংবাদিক অমিত ভার্মার  সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল এই নিষেধাজ্ঞা। মূলধারার মিডিয়া কলামিস্টরা “নেট ন্যানি” সরকারের “মধ্যস্থতাকারী, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা” র পরিচায়ক এই নিষেধাজ্ঞার সমালোচনায় নেমেছিলেন। সবিতাভাবির  চরিত্রটি ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে একটি অনলাইন আন্দোলন হয়েছিল। 

  ২০১৩ সালে সবিতা ভাবিকে মুখ্য চরিত্র করে সিনেমাও করেন পুনীত আগরওয়াল, ব্রিটেনের বাসিন্দা ।  উদারবাদী, ভোগবাদী,  মার্কিন সংস্কৃতির অনুসারীদের অসভ্যতা বলে বেশ কিছু দক্ষিণপন্থী, রক্ষণশীল প্রাচীন পন্থীর প্রতিক্রিয়া হয়েছিল সে বিষয়েও। এই সমস্ত কথাই তুলে আনে সবিতা ভাবির অপ্রতিরোধ্যতা। বাধা দিলে বেড়ে বেড়ে যায় যে জনপ্রিয়তা।  

সমাজ বিজ্ঞানীরা আজকাল যে কোন জনপ্রিয় মাধ্যমের মধ্যেই খোঁজেন বিষয়। তাই, আজ সবিতাভাবিও আলোচনার অধ্যয়নের বিষয়। কেন সবিতাভাবিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এর তিনটে কারণ। এক, ভারতীয় নারীদের ওপর যুগ যুগ ধরে চেপে বসে আছে সুখ সম্বন্ধে একটি অপরাধবোধের অনুভব। নারী আর যাই করুক, যৌন সুখ সে নিতে পারেনা, নিজের ইচ্ছা কামনা বাসনা চরিতার্থ করলেই সে হয়ে যায় নষ্টা স্ত্রীলোক। তার আদর্শ হল সীতামাঈ-এর মত দুঃখ পাওয়া। তার আদর্শ হল অন্যদের সেবা করে করে শরীর পাত করা। কিন্তু নিজের জন্য শরীরী সুখের বন্দোবস্ত কোনভাবেই সে করবে না। সবিতাভাবি এই স্টিরিওটাইপ থেকে বের করে আনছে ভারতীয় নারীকে। 

দুই, ভারতীয় ভাবিদের স্টিরিওটাইপে সে বসবাস করছে, সে শাড়ি পরিহিতা গৃহবধূ। কিন্তু একই সঙ্গে সে ভেঙে ফেলছে সেইসব স্টিরিও টাইপ। 

তিন , সবিতাভাবি এক উচ্চবর্ণের উচ্চবিত্ত মহিলা হলেও, সে নানা ধরণের মানুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করছে, তাদের জাতি , শ্রেণী বা লিঙ্গ বড় কথা নয়। 

এক ওয়েব লেখক, যিনি সবিতাভাবির কমিক্স এর উদ্ভট প্লট কয়েকটির উদ্ভাবনকারী , তিনি লিখেছিলেন, সবিতাভাবি কেন তরুণদের মন কেড়েছিল। এক, তার নটি-পনা বা দুষ্টুমির কারণে। অর্থাত আবার সেই স্টিরিওটাইপ ভাঙা। আর দুই, তার দেশি-পনা বা দেশজ ভাবধারাটির জন্য। সে যে ভারতীয় নারী, তাই সে চেনা। প্রধানত পর্ন-জগতের সব নারীচরিত্রই আজকের দিনের পুরুষের কাছে বিদেশি চরিত্র, বা বিদেশিভাবাপন্ন চরিত্র। একমাত্র সবিতাভাবিই দেশজ। ভাববার মত বিষয়।

ভারতীয় মেয়েদের যৌনতাবোধ ও তাকে স্বীকার-অস্বীকার

এসো সৌদামিনী, বলো কীভাবে আমার চুলগুলি

কালো হয়ে উঠতে পারে, দন্তরুচি পাহাড়চুড়োয়

জমা বরফের মতো, কীভাবে চোখের নীচে কালি

চলে যাবে বলে দাও, চর্চা করো পায়ের ফাটায়ও

সৌদামিনী, আমি চাই আমার এ বুড়ি শরীরের

সব দোষ সব খুঁত ঢেকে যাক তোমার প্রলেপে

হাসছ বুঝি? শোন বলি, কোনদিন জাগবে না ভেবেও

যখন শরীর জাগে, জেগে ওঠে, কেউ আর পালাতে পারেনা। ( সুতপা সেনগুপ্ত, নাপতিনীর সঙ্গে কথা)

ভারতের মেয়েদের কাছে যৌনতা একটি ট্যাবু শব্দ। আনন্দ তবু চলে, কিন্তু সুখ ? তার উদবোধন বা উদযাপন নৈব নৈব চ। নিম্ফোম্যানিয়াক নারী সমাজে অমিল নয়, কিন্তু তারা আদর্শগত ভাবে আমাদের কাছে “ঢলানি” ” খানকি” বা “নষ্টা”, “মন্দ মেয়ে”। যে কোন মেয়ে যে নিজের ইচ্ছেতে পুরুষে উপগত হয় সেই নষ্ট বা মন্দ, এটাই আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতির শিক্ষা। নিম্ফোম্যানিয়াক শব্দটিই আমরা ছোটবেলায় শিখেছিলাম নেগেটিভ বা মন্দ শব্দ হিসেবে। 

লায়লা খোন্দকার তাই ত লেখেনঃ

‘সীতা নামের অনেক মেয়ে তো ভারতবর্ষে আছে, আপনি কি এমন কাউকে চেনেন যার নাম দ্রৌপদী?’ এ ধরনের প্রশ্ন একমাত্র আনিলাই করতে পারে। কোনো কোনো পাঠক হয়ত জানেন যে, সে আমার সহকর্মী- অসম্ভব মেধাবী ও কর্মদক্ষতায় অতুলনীয়। ‘দ্রৌপদী নামে পরিচিত কেউ আছে বলে তো মনে পড়ছে না। কেন বলুন  তো?’ উত্তরে বলি। আনিলা মন্তব্য করে, ‘আমার মনে হয় ভারতবর্ষের সমাজ দ্রৌপদীর মতো প্রতিবাদী নারীর জন্য এখনো তৈরি নয়, তাই মা-বাবারা তার নামে মেয়ের নাম রাখে না। বরং সীতার মতো সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করা নারীই বেশির ভাগ মানুষের পছন্দ।’ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর ‘কৃষ্ণা কুন্তী ও কৌন্তেয়’ বইটির দ্রৌপদী বিষয়ক অধ্যায়টি পড়ি। এই নারীর তীক্ষè বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব ও মানসিক শক্তিতে মুগ্ধ না হয়ে উপায় আছে কি? পাশাখেলায় যুধিষ্ঠির তাকে ‘পণ’ রেখে হেরে যাওয়ায় তার কঠিন প্রশ্নের সামনে ‘জ্ঞানী’ কুরুবৃদ্ধরা নিরুত্তর থেকেছে। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী সীতা ও দ্রৌপদীর তুলনামূলক আলোচনা করে লিখেছেন :

‘রামায়ণের সীতা এবং মহাভারতের দ্রৌপদী- এই দুজনেরই একমাত্র মিল হলো যে তারা অযোনিসম্ভবা- অর্থাৎ কিনা তাদের জন্মে অলৌকিকতার গন্ধ আছে। কিন্তু এই দুই মহাকাব্যের নায়িকা চরিত্র এত বিপরীত যে ভয় হয়- একের পরিস্থিতিতে আরেকজন পড়লে কি করতেন। কল্পনা করতে মজা পাই- যদি দন্ডক বনে লক্ষণের গন্ডির বাইরে বেরিয়ে এসে দ্রৌপদী ভিক্ষা দিতেন রাবণকে, তবে হয় তাপসবেশী রাবণের দাড়ি- গাছি উপড়ে দিতেন দ্রৌপদী, আর সীতা যদি শ্লথবাসা হতেন উন্মুক্ত রাজসভায় তবে তিনি তক্ষুণি ধরণী দ্বিধা হবার মন্ত্র পড়ে চিরতরে ঢুকে পড়তেন পাতালে; মহাভারত কাব্যখানাই অসমাপ্ত রয়ে যেত। যদি বলেন রাজসভায় দ্রৌপদীই বা এমন কি করেছেন যে, আমরা তার গুণপনায় মুগ্ধ হচ্ছি। আমি বলব অনেক কিছু করেছেন, যা সর্বংসহা সীতার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সীতাকে যদি রামচন্দ্র বলতেন যে তুমি সভায় এসে শ্বশুরের সামনে কান্নাকাটি কর তাহলে তাই করতেন। তার পক্ষে কি রামচন্দ্রকে ‘জুয়াড়ি’ সম্বোধন করে এই প্রশ্নটা করা সম্ভব হতো যে, পাশা খেলায় আগে নিজেকে বাজি রেখে হেরেছেন, না আগে তাকে বাজি রেখেছেন…

এ তো রীতিমতো ‘ল-পয়েন্ট’। সভাসদদের কারও পক্ষে এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হয়নি।’

দ্রৌপদীর মতো যেসব নারী এই ধরনের বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করে অসংগতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়, তাদের জন্য সমাজটা কি এখনো তৈরি হয়েছে? কিছু মানুষ বোধহয় সময়ের আগেই পৃথিবীতে চলে আসে অথবা তারাই তৈরি করে ভবিষ্যৎ- নিজেদের হৃদয় খোড়া বেদনা আর সাহসের বিনিময়ে। মনে পড়ে গেল আরেকজন প্রবল মানুষ মহাশ্বেতা দেবীর ‘চোলি কা পিছে’ গল্পে ‘বিখ্যাত হিমালয় চড়িয়ে’ শীতল মালিয়ার বর্ণনা :

‘শীতল নাকি দুটো মানুষ। হিংস্র ও অ্যাগ্রেসিভ শীতল বারবার হিমালয়কে আক্রমণ করে। শান্ত, কোমল শীতল এ জল-গাছ নৈঃশব্দে ডুবে বসে থাকে। হিমালয় ও সল্ট লেক ব্যতীত ভারতে কত না প্রাকৃতিক শোভা আছে। শীতল সেসব ল্যান্ডস্কেপ সহ্য করতে পারে না। শীতল মনে মেজাজে ২০৯৪ সালের মেয়ে, অথবা শীতলের শতাব্দী এখনো আসেনি।’

দ্রৌপদী, আনিলা আর শীতলের মতো নারীদের শতাব্দী কবে আসবে?

লায়লা খোন্দকারের তোলা প্রশ্নগুলি যদিও যৌনতা সম্পর্কিত নয়, তবে মেয়েদের স্ব ইচ্ছা আর মেয়েদের কাম ইচ্ছাকে প্রায়ই আমরা গুলিয়ে ফেলেছি। গুলিয়ে গেছে স্বৈরিণি ও স্বৈরতান্ত্রিক। ছোটবেলায় স্ব+ঈর, সন্ধিবিচ্ছেদ শিখে মাকে প্রশ্ন করেছিলাম, স্বাধীনতা সুন্দর শব্দ, কিন্তু স্বৈরতন্ত্র খারাপ কেন? আসলে স্বৈর শব্দটিতে আছে স্বেচ্ছাচারিতার গন্ধ।

স্বৈরতন্ত্র খারাপ শব্দ, আর স্বৈরিণী ট্যাবু শব্দ। ১৯৭৫ সাল, আমার বয়স দশ। তখন এমার্জেন্সি। কাগজে কাগজে ইন্দিরাজির বিষয়ে বাছা বাছা শব্দপ্রয়োগ। সদ্য গল্পবই পড়া জ্ঞান নিয়ে, একবার ভুল করে ইন্দিরা গান্ধির সম্বন্ধে স্বৈরাচারী শব্দটি প্রয়োগ করতে গিয়ে বছর দশেক বয়সে স্বৈরিণী শব্দটি ব্যবহার করে ফেলেছিলাম বলে রাম বকুনি খেয়েছিলাম আমার মায়ের কাছে। কী সব কথা বলছ! মায়ের মুখ চোখ দেখেই মনে হয়েছিল, নিষিদ্ধ শব্দ ওটা, যদিও তখনই কোন না কোন বইতে পড়েই তো জেনেছি শব্দটা ( দুপুরবেলায় ছুটির দিনগুলো তো মা-দিদিমাকে ঘুমোতে দিয়ে যা হাতে পেতাম সব পড়ে ফেলতাম বাছবিচার না করেই বড়দের বইয়ের আলমারি থেকে) । তখন, যখন সবার আড়ালে খুব পড়ছি, পাঁজির রসালো বিজ্ঞাপন। প্রচন্ড বিশাল আকারের বাঁধাকপি ফলানোর উপায় থেকে মন্ত্রপূত তাবিজ কবচ দিয়ে পুরুষকে বশে রাখার বিশেষ উপায় পর্যন্ত।

তো, সেই সময় থেকে মাথায় প্রশ্ন ঢুকে গেলঃ স্ব – ঈর কেন মন্দ? মন্দ মেয়ে কাকে বলে? একবার ক্লাস টুয়েল্ভে আমার বান্ধবী পুষ্পিতার সঙ্গে হাজরা মোড়ে ওদের বাড়িতে, আমাদের বাড়ি থেকে দু পা দূরে, য়াড্ডা দিতে দিতে দেরি করে ফেলেছিলাম। বোধ হয় সাতটার বদলে সাড়ে সাতটা বা আটটায় ফিরেছিলাম। মা খুব রেগে বলেছিলেন, নষ্ট মেয়ে। এই বকুনিটার অন্য মানে আছে ততদিনে বুঝে গিয়েছি।

“শুয়েছি যাদের সঙ্গে – তাদের বিরুদ্ধে আমি অস্ত্র ধরতে পারব না দামিনী

সুন্দর সরণি ওরা, ঐ পথে ঢিল আমি কিছুতেই ছুঁড়তে পারব না

করুণ মধুর ওরা – যদিও লম্পট সর্দার,

সে লাম্পট্য কীভাবে যে সহ্য হয়েছে বারবার;

হাতে ছিল রামধনু তাদের, বৃষ্টিভেজা, আমি সেদিকে তাকিয়ে

বলেছি –

ঈশ্বর, দিয়ো না শাস্তি, জটিল সমাজ কাঠামোয়

ওরাই আমার

         সম্ভব করেছে বহু বিয়ে…

( অতিবিবাহিত, শ্বেতা চক্রবর্তী)

আমাদের যখন কাঁচা বয়স, তখন সদানন্দ রোডের তপন থিয়েটারে দীর্ঘকাল ধরে দুটি নাটক চলত। একটির নাম ছিল নহবত। যেটা নিশ্চয়তই ছিল নিরীহ বিবাহ কাহিনি। কিন্তু দ্বিতীয়টির বিজ্ঞাপন আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত, তার নামের জন্য, বারবধূ।

বার। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম বারোজন বধূর কাহিনি। পাঁচ ছয় বছর বয়স আমার তখন। মাকে জিগ্যেস করে উত্তর পাইনি। মা অযথা উত্তর না দিয়ে গম্ভীর কেন হয়ে গেলেন বুঝিনি। সহজ প্রশ্নের সহজ উত্তর মেলেনি, বারবধূ মানে কী?

“দিদিমণি, আমি ভাল হতে চাইনা আজকাল

আমি খারাপ হয়েই থাকতে চাই

খারাপ হলেই আমি একা অন্ধকারে বিস্তীর্ণ এ আকাশের নীচে

দাঁড়াতে পারব

আর সারাটা সকাল ঘুমোব দারুণ ঘুম

দিদিমণি, বিকেলে সাজার পরে

সন্ধেবেলায় আমি দাঁড়াব ঈশান কোণে

একা ঈশ্বরীর মতো

মানুষের অপেক্ষায়

খারাপ হলেই আমি দাঁড়াতে পারব

দুঃখী, কামুক, লম্পট – বাতিল হয়ে যাওয়া

মানুষের অপেক্ষায়- বৃষ্টি আর ঝড়ে …

( শ্বেতা চক্রবর্তী , জাদুমণি)

সবিতা ভাবি মন্দ মেয়ে কিনা, সেকথা সমাজের পিসেমশাই বা গুরুমশাইরা বলবে। তবে এটা ঠিক, যে সবিতাভাবির বাইরেটা সংসারির আর চরিত্রটা তথাকথিত হাফগেরস্তের। সে কমপ্রোমাইজ করছে সংসারে, যেমন টা বাস্তবে অনেক মেয়ে করে। কিন্তু পুরোপুরি স্বৈরিণী হবার হ্যাপা আছে। সমাজের চোখে পতিতা হবার হ্যাপা বলে গেছেন শরৎচন্দ্র থেকে আশাপূর্ণা সকলেই। 

শরৎচন্দ্রের পতিতাপ্রেম

এ সূত্রে শরৎচন্দ্রের নারী চরিত্রদের নিয়ে দুচার কথা উঠেই পড়ে, আর এ উল্লেখে জড়িয়ে যায় তাঁর সমাজবীক্ষাও । সুকুমার সেন বলছেন, অনেক উপন্যাস ও গল্পে, “মৃতপ্রায় সমাজে নারী সম্পর্কে অযথা উৎপীড়নের চিত্র প্রাধান্য লাভ করিয়াছে। পূর্ব্ব বর্তী লেখকেরা এমন অবস্থায় সমাজ-ব্যবস্থাকে অকরুণ মানিয়াছেন, তবে অন্যায় বলেন নাই এবং অমান্যও করেন নাই। শরৎচন্দ্রও অমান্য করিতে সাহস করেন নাই, তবে অন্যায় বলিয়াছেন মুক্তকন্ঠে ।”

শরৎচন্দ্র লিখেছিলেন, সমাজ জিনিশটাকে আমি মানি, কিন্তু দেবতা বলে মানিনে।

শরৎচন্দ্রের আমাদের সাহিত্যে যে অবদান সবচেয়ে বড় সেটা পতিতার প্রেম ও একনিষ্ঠতার ধারণা। ( পরবর্তী ছায়াছবির দুনিয়ায় এই  মডেল খুব প্রচল হবে) কিন্তু সুকুমার সেনের বক্তব্য, টেক্সট বুক মরালিটি বা পুথিগত নীতিবোধের বাইরে বৃহত্তর চারিত্র্য নীতির ধারণা এবং সমাজের অনুবীক্ষণে যারা পতিতা তাদের মহত্বের এই ধারণা, এগুলো রবীন্দ্রনাথের হাতফেরতা হয়েই নাকি শরৎচন্দ্র পেয়েছেন। তবে তিনি অস্বীকার করেননি  যে শরৎচন্দ্র একনিষ্ঠ প্রেমকে সতীত্বধারণার খাঁচা থেকে বের করে এনেছিলেন।  শরৎ এর মতে, “সতীত্বের ধারণা চিরদিন এক নয়। পূর্ব্বেও ছিল না, পরেও হয়ত একদিন থাকবে না একনিষ্ঠ প্রেম ও সতীত্ব যে ঠিক একই বস্তু নয়, এ কথা সাহিত্যের মধ্যেও যদি স্থান না পায়, ত এ সত্য বেঁচে থাকবে কোথায়?”

তার চেয়েও গুরত্বপূর্ণ উল্লেখ সুকুমার সেনের লেখায় আছে। সেটা হল এই যে এক সময় শরৎচন্দ্র বাঙলা দেশের কুলত্যাগিনী বঙ্গরমণীর ইতিহাস সংগ্রহ করেছিলেন। তাতে বিভিন্ন জেলার সহস্রাধিক হতভাগিনীর নাম, ধাম, বয়স , জাতি, পরিচয় ও কুলত্যাগের সংক্ষিপ্ত কৈফিয়ৎ লিপিবদ্ধ ছিল। শরৎচন্দ্র হিসেব করে দেখেন, এই হতভাগিনীদের শতকরা সত্তরজন সধবা। বাকি ত্রিশটি মাত্র বিধবা। প্রায় সকলেরই হেতু লেখা ছিল, অসহ্য দারিদ্র্য ও স্বামী প্রভৃতির অসহনীয় অত্যাচার – উৎপীড়ন।

শরৎচন্দ্র লিখেছিলেন,  “সমাজসংস্কারের কোন দুরভিসন্ধি আমার নাই। তাই বইয়ের মধ্যে আমার মানুষের দুঃখ বেদনার বিবরণ আছে, সমস্যাও হয়ত আছে, কিন্তু সমাধান নেই। ও কাজ অপরের, আমি শুধু গল্পলেখক, তা ছাড়া আর কিছুই নই। “

পার্বতীর বেদনার উৎস দেবদাসের কাপুরুষতা, না সমাজের অদ্ভুত ব্যবস্থা? যে ব্যবস্থা দুটি শিশুকে এক সঙ্গে থাকতে দেয়, কিন্তু বিবাহিত হতে দেয়না সামাজিক কিছু তুচ্ছ বিধিনিষেধের কারণে? ্সামাজিক দিকেই পাল্লা ভারি। কিন্তু পার্বতীর চরিত্রকে অবাস্তব বলা যায় না একেবারেই, বরং তার বৃদ্ধ স্বামী ও নতুন সংসারের সঙ্গে ব্যবহারের ভেতরে অনেক ভাবনার রসদ জড়ো হয়। আত্মত্যাগের মাহাত্ম্য ইত্যাদি ইত্যাদির পরেও ,আমি দেখি শান্ত সজাগ বুদ্ধিমতী ও “প্র্যাকটিকাল” পার্বতীকে, যে নিজের গায়ের গয়না সৎ মেয়েকে খুলে দিয়ে একধরণের যুদ্ধবিরতি ও শান্তিস্থাপনের চমৎকার কূটবুদ্ধির পরিচয় দেয়।

একইভাবে , চন্দ্রমুখী ক্ষমতায়িত নয়, কিন্তু ক্ষমতার প্রতিভাস তার আছে। যে মুহূর্তে পুরুষ এসে তার পায়ে লুটোচ্ছে, মেয়েটি নিজেকে ভুবনেশ্বরী বোধ করছে। তার সৌন্দর্য এবং তার আপাত স্বাধীন জীবনচর্যার ফলেই সে গ্রামে ফিরে গিয়ে থাকতে পারে। পাড়ার মুদির সঙ্গে টাকাপয়সার হিসেব কষে ও বাড়ি কেনাবেচা, ভাড়া করা ইত্যাদির  সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সব বাস্তব, তবে দেবদাসের প্রতি তার প্রেম একটু অবাস্তব।

 চন্দ্রমুখীর  গৃহ ত্যাগ বা পতনের কারণ বিবৃত হয়নি। তার ব্যাকগ্রাউন্ড এর অভাব লেখাটাকে অবাস্তব করছে । আর , সবচেয়ে অদ্ভুত একবার দেখা হতেই দেবদাসের ঘৃণায় মুগ্ধ হয়ে তার প্রতি গজিয়ে ওঠা প্রেম ও  আনুগত্য । কিন্তু সেটাই শরৎচন্দ্রের নির্মাণ, দেখাবার বিষয়, তাঁর অভিপ্রেত।

চন্দ্রমুখী সম্বন্ধে একটি বক্তব্য পাওয়া গেল এক লেখকের কাছে যিনি নিজে হিন্দি অনুবাদে পড়েছেন দেবদাস।  ইংরেজি ভাষায় উর্ণাভি উপন্যাসে্র লেখক সুমেধা ভার্মা ওঝা। মৌর্য যুগের এক চৌষট্টি কলায় পারদর্শিনী নায়িকাকেন্দ্রিক উপন্যাস লিখেছেন  সুমেধা।  রাঁচির মেয়ে। ওঁর দিদিমা ও মা বাংলায় পড়েছিলেন শরৎচন্দ্র,  কারণ দিদিমা শান্তিনিকেতন এর ছাত্রী ছিলেন, আর রাঁচির সব লাইব্রেরিতে বাংলা বইয়ের সম্ভার ছিল ঈর্ষা করার মত।

তো, এই শরৎ অনুরাগিনীর মতে, চন্দ্রমুখী হল সংস্কৃত নাটকের বসন্তসেনা থেকে প্রসাদের আম্রপালী হয়ে বাহিত রাজকীয় গণিকা ট্রাডিশনের প্রতিভূ।  অর্থাৎ,  শরতের নির্মাণে গণিকার যে পুন:প্রতিষ্ঠা তা যেন ভারতীয় সংস্কৃতির অতীত গরিমার দিকেও এক পা দিয়ে রাখে।

আশাপূর্ণার পৃথিবী

পুড়বে মেয়ে, উড়বে ছাই, তবে মেয়ের গুণ গাই। এই প্রাকৃত মতবাদকেই বার বার নানাভাবে ব্যক্ত করেছে বাংলার রক্ষণ শীল সমাজ। আশাপূর্ণা তার টিপ্পনী কেটেছেন আশ্চর্য দক্ষতায় ও সততায়। গৃহলক্ষ্মী থেকে কুলকলঙ্কিনী হয়ে যাওয়া কত সহজ, একাধিক গল্পে যে কথা তিনি বলতেন? আ ছিছি বলে সমাজ কীভাবে একটি মেয়েকে দেগে দেয় কুলটার ছাপ্পায়?

এখনো কি দেখিনি ডিভোর্সি শুনে একটি মেয়ের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া বাড়িভাড়া চাইতে গেলে? দেখিনি অন্য পুরুষের প্রতি সামান্যতম প্রশ্রয় দেখলে  পাড়াশুদ্ধ অফিসশুদ্ধ এমনকি পরিবারের ভেতরেও বাঁকা হাসি অথবা প্রচন্ড ব্ল্যাকমেলিং এর চাপ?  

আশাপূর্ণা শহর গ্রাম মফস্বল নির্বিশেষে একটাই সমাজে, ৯০ শতাংশ মানুষ তখন যেভাবে ভাবে, বাঁচে, অন্যদের, থুড়ি মেয়েদের বাঁচতে বাধ্য করে, সেই মাপা চাপা বন্ধ কুয়োটায় (মতান্তরে স্বর্গটায়) বসে  লিখে চলেছেন ত সেই জগতটারই কথা। ডকুমেন্টেশন। নিপুণ হাতে শুধু লিখে রাখা, কতটা নরক হয়ে যেতে পারে, গৃহলক্ষ্মীদের স্বর্গটা। কেন এক ঝুড়ি মাছের পাশে শুয়ে থাকা মেছুনি রজনীগন্ধার গন্ধ নিয়ে গল্প বলবেন ? ,  জেলখানার কয়েদি তার সলিটারি সেলের ভিজে ভিজে নোংরা দেওয়ালের গল্পই ত লিখবেন । অনেক উপরে,   নীলাভ জানালার খুপরিটা ছাড়া যার কাছে বড় আকাশ নেই কোন, তার নীহারিকা পুঞ্জ নিয়ে কথা বলা কতটা হাস্যকর হত। আশাপূর্ণা আসলে যে মেয়েদের  লেখাগুলো লেখেন সেগুলো ঐ সতীলক্ষ্মী, সতীসাধ্বীর স্টিরিওটাইপের আড়ালেই প্রেমের বাসনার গল্প।  চাপা লড়াইয়ের গল্প, সেগুলো। তাইই,  সাবভার্শান। পরিস্থিতির দলিল তৈরি করে তিনি আসলে বলছেন একটা চূড়ান্ত বাস্তবতার কথা। বাস্তবতা থেকে উদ্ধারের স্বপ্ন বলছেন না সব সময়ে। বরং চাপা গলায় বলছেন, অনুদ্ধারটা এসে দেখে যাও তোমরা।  বাস্তবতার ভেতরের অলিগলি, গুপ্তঘাত, নানা রকমের বিপজ্জনক শুঁড়িপথ উন্মোচন করছেন, আপাতদৃষ্টিতে গোলগাল গল্পগুলো বলবার ছলেই। স্বামীপরিত্যক্তা এক মেয়ের শুদ্ধ বৈধব্য যাপন, বনাম, এক রাত্রে স্বামীর সঙ্গেই দেখা হওয়া। স্বামী চলে যান।  পরদিন সকালে কুলকলঙ্কিনী বলে দেগে দেওয়া হয় তাকে। এই ভয়াবহ স্ববিরোধ… এসব গল্পকে তুলে এনেছেন তিনি কী সাবলীলভাবে।

একটি ছোট গল্পে যিনি লিখেছিলেন, এক বধূর স্বামীর মৃতদেহ বাড়িতে আসার পর, স্ত্রী, শোক করবার বদলে,  স্বামীর কাছে কে গোপন চিঠি লিখত,  সেটা জানার জন্য মৃতের পকেট থেকে বাড়ির ডাকবাক্সের চাবি খুঁজছে, এমন এক সংঘাতময়, বীভৎস নিষ্ঠুর সত্যের গল্প।

মূলত বধূদের গল্প বলেন তিনি , বলেন বদ্ধ জীবনের গল্প। রবীন্দ্রনাথের “চরণতলাশ্রয়ছিন্না মৃণাল” এর থেকে এই গল্প অনেক আলাদা। কারণ এতে লেগে আছে মেয়েজীবনের আঁশগন্ধ। রক্তের ছাপ। 

যৌনতা দিয়ে কাজ হাশিল করা কি নারীর ক্ষমতায়ন? না!

বার বার সবিতা ভাবির আখ্যানে আমরা দেখছি সবিতা ভাবি পুরুষদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে, দুধ ওয়ালা গ্যাসওয়ালা সবাইকে যৌনতা ফ্রি তে দান করছে আর তারাও বিনিপয়সায় কাজ করে দিয়ে যাচ্ছে তার। পর্নোগ্রাফির মূল কাজ সাহিত্য রচনা করা না, সিরিয়াস কথা বলা না। বরং উত্তেজিত করা। মানুষের স্বপ্ন কল্পনাকে উদবোধিত করা, কিন্তু শর্ট টার্মে। সে কাজে সবিতাভাবি সফল হতে পারে। তাই বলে এটা কোন দীর্ঘস্থায়ী প্রকল্প হতে পারেনা নারীস্বাধীনতার, এটা নারীস্বাধীনতা নয়। এটা পুরুষকে সুরসুড়ি দেবার যন্ত্র হতেই পারে যদিও। হাসিল করতেই পারে কিছু আপাত উদ্দেশ্য। সুখদান। এবং সুখ প্রাপ্তিও। এর মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ সম্ভব। যদিও সবিতাভাবি সিরিজের এক লেখক সুমিত কুমার লিখেছেন, 

I do not want to talk about how the character liberates women etc. In my head they don’t need anyone or any character to liberate them. They are liberated, they liberate themselves. It’s an individual who does things. If serendipitous thing like an encounter with a fictional character helps it, then great. I think dissection is just useless debate, which wastes essential time which we can use to take action, useful small acts that begin change.

মিটু, সাম্প্রতিক যে আন্দোলন বারে বারেই হানা দিচ্ছে, তার সূত্রে বাংলাভাষার এক ঔপন্যাসিক সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, নারীর ক্ষমতায়ন নাকি সম্ভব হয় যখন সে তার যৌনতাকে “ব্যবহার” করতে শেখে তখন।  

মিটু আন্দোলনের ঝড় উঠলেই  সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে কাউন্টার করা হয় মেয়েদের sexual favour নেওয়া দিয়ে। মেয়েরা কি sexual favours নেয়?? শ্মশানের নিস্তব্ধতা! এখানে নারী হিসেবে হিরণ্ময় নীরবতা অবলম্বনই সতী নারীর লক্ষণ। কিন্তু সেই কবে থেকে সব কিছু উল্টো বলা অভ্যেস করে ফেলেছি। একদিকে গায়ের রং, শরীরের গঠন এসবের discrimination এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠি আমরা। প্রচুর লেখালেখি হয় এই নিয়ে। প্রচুর সদর্থক সংলাপ তৈরি হয়। অন্যদিকে সেলফি ক্যামের বিউটি মোডে সব শ্যামবর্ণ সাদা থেকে সাদাতর হতে থাকে। আসল চেহারা মুছে দিয়ে নাক, মুখ, চোখ সব ল্যাপালেপি হয়ে যায় সেই পুরোনো সৌন্দর্যের ধারণাকে প্রতিষ্ঠা দিতে গিয়ে। মুখের দাগ ঢাকি, ব্রণ ঢাকি। ফ্রেকেলস্ ঢাকি। বয়েস ঢাকি। দেখা যায় আসল রূপের ইতিহাস বিকৃতি ঘটে গেছে কখন অজান্তে। কেন যখন মননের স্তরে discrimination এর বিরোধিতা করি তখন একই সঙ্গে সেলফি ক্যামকে জাদু আয়নার মত ব্যবহার করি আমরা মেয়েরা? করি কারণ, এটা হল আমাদের বডি পলিটিক্স। কোন angle থেকে ছবি তুললে আমাকে রোগা লাগবে এটা আমার বডি পলিটিক্স। আমরা যখন আনখশির ডুবে যাই এই সব প্রেজেটেশনে তখন বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আমরা সে সব অস্বীকারও করি। তাই সমস্ত পৃথিবী জুড়ে women empowerment যখন আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ উচ্চতায় পৌঁছোচ্ছে তখনই কিন্তু কোটি কোটি ফোন বিক্রি হচ্ছে শুধু সেলফি ক্যামের গুণমান বিচার করে এবং তার আসল ক্রেতা মেয়েরাই। তখনই কিন্তু নারীর পরিণত মন, অভিজ্ঞতা এসবের থেকে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে তার youthful look, চিরাচরিত সৌন্দর্যের ধারণায় নিজেকে ফিট করানো।

মেয়েদের বডি পলিটিক্স কথাটা কবে সারফেস করে সভ্যতায়? বলা মুশকিল। মোটামুটি ভাবে বলা যায় পুরুষের সঙ্গে সমান তালে বাইরের জগতে কাজ করার অধিকার, পুরুষের সমান wages পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাতৃত্বের ছুটি, সন্তান পালনে রাষ্ট্রের সাহায্য, অ্যাবরশনের অধিকার, প্রজননদের ওপর অধিকার, বার্থ কনট্রোল, মেয়েদের শরীরের ওপর সোসাইটির কনট্রোল, violence against women, objectification of women body, ইত্যাদি কত গুলো নারীর একান্ত নিজস্ব প্রতিবন্ধকতাকে overcome করাকেই মেয়েদের বডি পলিটিক্স বলা হয়। কিন্তু এসব বাদ দিয়েও মেয়েদের একটা অন্য মাত্রার বডি পলিটিক্স আছে যেটা নিয়ে একেবারে কথা বলা হয় না। সেটা হল তার শরীরকে, যৌনতাকে তার প্রয়োজনে তার ব্যবহার করার বাস্তবতা। ব্যবহার করা হয়? হ্যাঁ হয়। মেয়েরা নিজেদের যৌনতাকে হাজার হাজার বছর ধরে ব্যবহার করে এসেছে এটাকে না সত্য বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, না বাস্তব বলে মেনে নেওয়া হয়েছে। এটার একটা empowering দিক আছে। সেটা যেদিন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বুক ফুলিয়ে মেয়েরা বলতে পারবে- সেদিন, সেদিন পুরুষতন্ত্র শেষ! কেন এটাকে এই উল্টো দিক থেকে দেখতে দেওয়া হয় না? কেন যৌনতার সওদাকে শুধু অন্য মাত্রার শোষণ বলে চিহ্নিত করা হয়? ধর্ষণ, মলেস্টেশন, যৌন হেনস্থা ছাড়াও নারীর যৌনতার ক্ষমতার দিকটাকে এরকম চাদরের তলায় রাখা হয়। কারণ তা না হলেই নারীর মরালিটি নিয়ে পুরুষতান্ত্রিক প্রশ্ন ওঠে। তখন এটা হয়ে যায় নৈতিক হার, চরিত্রহীনতা, বেশ্যাবৃত্তি, কমপ্রমাইজ, অসতীপনা। এই বিশেষণ গুলো মেয়েরা আড়াল করতে বদ্ধপরিকর কারণ তাহলেই আবার পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সে ব্রাত্য হয়ে যাবে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের সাপোর্ট পেতেই সে নিজের যৌনতার ক্ষমতা ব্যবহার করা সম্পর্কে innocent সেজে থাকার চেষ্টা করে যায়। কিন্তু যতবার মেয়েরা আঁচল খসিয়েছে ( এই সব উদাহরণ গুলো ভারতীয় সভ্যতার কনটেক্সটেই দেব, প্যান্টি হোস নামিয়েছে বলব না), যতবার পেটের ভাত থেকে শুরু করে চাকরির উন্নতিতে কাপড় তুলেছে ততবার আসলে মেয়েদের বডি পলিটিক্স জিতে গেছে। এই জিতে যাওয়াটাকে হেরে যাওয়া হিসেবে দেখানোর বয়ান হল sexual favour। আসলে উল্টোটা। কোন favour নেয়নি মেয়েরা। মেয়েদের ক্ষমতার উৎস যদি মেয়েদের শরীর হয়, তাহলে মেয়েদের যৌনতা হল বন্ধুকের নল। মেয়েদের যৌনতা যদি চাকা ঘোরায়, ভাতের ব্যবস্থা করে, ইনক্রিমেন্ট আনে, পদোন্নতি আনে, সুযোগ হিসেবে দেখা দেয় তাহলে স্বীকার করতে হবে যে সেই যৌনতা একটা ক্ষমতা। Power. মেয়েরা favour নেয়নি, সেই ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছে। মেয়েরা ব্যবহৃত হয়েছে বলতে যতটা অনায়াস, ব্যবহার করেছে বলতে ঠিক ততটাই ভীত, শঙ্কিত কারণ এখনো কোন স্ফিয়ারেই এই বয়ানের acceptance নেই। ঠিক যেমন ভাবে ক্লিওপেট্রা তার রূপ, শরীর, যৌনতা, কন্ঠস্বর, কটাক্ষ সব ব্যবহার করেছিলেন সিজার কিংবা আন্টনিকে বশ করতে, নিজের অতুল ঐশ্বর্য, ক্ষমতাকে ধরে রাখতে, রানীর আসনকে ধরে রাখতে, সাম্রাজ্য বিস্তার করতে, প্রজাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করেছিলেন ঠিক সেভাবেই দুর্ভিক্ষের সময় কোন অজ্ঞাতকুলশীলা নিজেকে মহাজনের অঙ্কশায়িনী করে আঁচলে চাল বেঁধে এনেছে কারণ তার যৌনতাই তার আয়ের উৎস। তার ক্ষমতা। হ্যাঁ, কিছুদিন আগে slut walk হয়েছে, আমি যদি slut হই তাতে তোর বাপের কি- এটা বুক বাজিয়ে বলেছে মেয়েরা, কিন্তু এখনো যৌনতা যে বিশুদ্ধ ক্ষমতা এটা কেউ বলছে না। আসলে পুরুষের শরীর কি নারীর থেকে আলাদা? পুরুষের শরীরকে কি killing machine হিসেবে ব্যবহার করেনি সভ্যতা? কিন্তু কি আশ্চর্য তাকে বলা হয়েছে বীর, fighter, সৈনিক। Killing machine হিসেবে পুরুষকে তো লজ্জা পেতে হয়নি? পুরুষের masculinityকে এই ভাবে কদর করা হয়েছে কারণ পুরুষের masculinity আর সভ্যতার সাম্রাজ্যবাদী স্বভাব একে অন্যের পরিপূরক। একটা ছাড়া অন্যটা নেই। পুরুষের masculinity পুরুষের অস্ত্র। তার স্বীকৃতি আছে। কিন্তু মেয়েদের যৌন ক্ষমতার কোন স্বীকৃতি নেই।

স্বীকৃতি নেই বলেই যে ব্যাপারটা নেই তা কিন্তু নয়। উপরন্তু তাকে লজ্জার আবরণ পরানো হয়েছে হাজার হাজার বছর ধরে। এই কারণেই মেয়েরা তাদের অনিচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের শরীরে থাবা বসানোর প্রতিবাদ করলেই তারা তো প্রয়োজনে সেক্সুয়াল ফেভার নেয় এই বলে তাদের কোনঠাসা করে দেওয়া হয়। হ্যাঁ মেয়েরা সেক্সচুয়াল ফেভার নেয় কারণ সেটাও মেয়েদের বডি পলিটিক্স। আর এখানে মরালিটির প্রশ্নটা? পুরোটাই পুরুষ নারীর কাছে যে সতীপনা কামনা করে তার অনুরূপ। এখানে মরালিটিটা মেল chauvinism এর সমানুপাতিক। নারীর সতীপনার primary ধ্যানধারণা নারীর কাছে কি সেটা নিয়ে আমরা প্রশ্ন করছি না কেন?”

এই ধারণার ভেতরে আপাত চাকচিক্য আছে। কিন্তু আছে একটি মেজর ফ্ল বা গুরুতর অসুবিধের জায়গা। কারণ, এই ধারণা নারীবাদী আন্দোলনের, মিটু আন্দোলনের, এমনকি মেয়েদের নিজের শরীর পুনরধিকার করার অ্যাজেন্ডাটাকেই মিথ্যা করে দেয়। যৌনতাকে ব্যবহৃত হতে দেওয়ার বাধ্যতাকে দেখায় সচেতন চয়েস হিসেবে , শোষণকে দেখায় জয় হিসেবে। পরবর্তীতে শোষিতের অবস্থানটা গুলিয়ে যায় এবং ভিক্টিমদের ভেতরে দুটো বিভাগ তৈরি করে। শোষিত হয়ে সফল নারীরা নিজেদের শোষণ ভুলে নিজেদের পিঠ চাপড়াতে শেখেন কেননা তাঁরা নিজের যৌনতাকে ব্যবহার করে আপাত সাফল্য পেয়েছেন। আর, এই বক্তব্য নারী আন্দোলনকে ও যৌনতাকে ব্যবহার না করা অজস্র নারীর লড়াইকে মিথ্যে করে দেয়।

প্রাসঙ্গিকভাবে অধ্যাপিকা অনুরাধা কুন্ডা এর বিপক্ষে লিখেছিলেন, 

নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য মেয়েরা যৌনতা ব্যবহার করতেই পারেন, এটা নিয়ে একটা তর্ক উঠেছে বটে। আমার মতে যৌনতা ব্যবহার এমপাওয়ারমেন্টের উৎস হতে পারে না। ওটা দিয়ে যা হয়, তা আর যাই হোক এমপাওয়ারমেন্ট নয়।

মানুষমাত্রেই নিজেকে সুন্দর প্রতিপন্ন করতে চায়।সুন্দরের একটা চাহিদা আছে।তবে সেটা সবসময় যৌনতা নির্ভর নয়।

মেয়েরা বেশি সাজে, বেশি পোজেসিভ, বেশি সৌন্দর্য সচেতন, এ সকল মিথ তৈরির পেছনে আর্থ সামাজিক কারন আছে। অনেক অনেক মেয়ে সকাল থেকে আয়না দেখার সময়ই পায় না।কোনোমতে একটা হাতখোঁপা করে কাজে চলে যায় ।তৎসত্ত্বেও বিউটি পার্লারের রমরমা আছে। মেক ওভার আছে ।ব্রাইডাল আছে।মেয়েদের মাথায় ঢোকানো হয় যে তাদের মলাট ই ললাট।আর ললাট হল বিবাহ।সেটার মূলে থাকবে সলিড অর্থনীতি । অথবা পুরুষের মনোরঞ্জন । সেক্সুয়ালিটি সম্বল করে মনোরঞ্জন বিবাহ অন্তর্ভুক্ত হলে সেটা সুখী দাম্পত্য । কর্পোরেট সেক্টর হলে ডীল। বিনোদন জগত হলে কাস্টিং কাউচ। পড়াশোনার জগত হলে আঁতেলেকচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং । আমাদের এক সহপাঠিনী ল্যাবে যাবার সময় ঘোষণা করে লো নেক ব্লাউজ পরে যেত। তাতে নাকি নাম্বার সহজে মেলে।এটা এমপাওয়ারমেন্ট বলতে আমার বিলক্ষণ আপত্তি আছে। শরীর ব্যবহার করে বডি পলিটিক্সে কিছু ফায়দা তোলা ই কি নারীবাদ?তাহলে তো জিগোলো জুটলেই মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়ে যেতো।

হ্যাঁ ।সেলফি ক্যামেরা আছে বটে।এডিট করার হাজার কারসাজি আছে।গ্লো আছে।কিন্তু নারীবাদ মেয়েদের ঐ এডিট করা ছবির বাইরেই নিয়ে যেতে চায় ।

প্রসাধনী মেখে বা ছবি এডিট করে নিজেকে সুন্দর প্রতিপন্ন করার মধ্যে একধরনের বিপন্নতা প্রকাশ পায়।বাঁধাগতের সুন্দর হয়ে ওঠার চেষ্টা আছে।একজন পুরুষ যখন নারীর রূপের প্রশংসা করেন, তার মধ্যে যৌন ইচ্ছা থাকতে পারে।আবার নাও পারে। একজন মেয়ে যখন মেয়ের রূপের প্রশংসা করে সেখানে যৌন ইচ্ছা থাকার সম্ভাবনা কম। ফলে মেয়েরা যখন মেয়েদের প্রশংসা করেন, তখন সেটা অনেক বেশি অবজেক্টিভ। অনেক ক্রিটিক্যাল । কাজেই অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যও হয়ে ওঠে অনেকরই কাছে।

আমি মনে করি মেয়ে বা পুরুষ সুন্দর হয়ে উঠতে চায় মূলত নিজের জন্য।নিজের চোখে নিজেকে ভালো লাগা ভীষণ মূল্যবান।এটা মানুষের সেক্সুয়ালিটির একটা অংশ বটে।যেটা তার ব্যক্তিত্বকে মর্যাদা দেয় ।সেল্ফ লাভ ।নিজের চেহারা , সাজগোজ নিজের পছন্দ হলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

তবে কি এটাকে মানুষ( শুধু মেয়ে নয়) হাতিয়ার করবে? যৌনতা তাহলে শুধু দেহজ?

ক্লিওপেট্রা যৌনতা ব্যবহার করে অ্যান্টনিকে পদতলে এনেছিলেন বটে।কিন্তু ঘোর কেটে যাবার পর অ্যান্টনি বিরক্তিতে ক্লিওপেট্রার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।উদ্দাম ও ইরোটিক যৌনতা হাতিয়ার করে রাণী দেশের সর্বনাশ করতে উদ্যত হলেন। অ্যান্টনির ও।ভদ্রলোককে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে টেনে আনলেন।লোকটার দেশ, সংসার সব গেলো।।ফল আমরা সবাই জানি। প্রেম নয়।শুধু কামনা ছিল। অতএব ধ্বংস অনিবার্য ।কোল্ড অক্টাভিয়া আর হট ক্লিওপেট্রার মধ্যে বাই পোলারিটি তৈরি করে অ্যান্টনিকে হিরো করে দেওয়া সোজা খেলা।

আর শেষ পর্যন্ত কিন্তু অ্যান্টনি ক্লিওপেট্রার বাঁধন থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত যদি রুশোর কথা বলি, তবে তিনিও তো মেয়েদের যৌনতা অবলম্বন করেই পুরুষকে ” বশ” করতে বলেছিলেন।রুশোর মতে মেয়েদের যৌনতা একটা হাতিয়ার, যেটা “ব্যবহার” করে মেয়েরা পুরুষের ” প্রভু” হয়ে উঠতে পারে।যৌনতা ও ছলনাকে মেয়েদের অস্ত্র করে দেখিয়ে পুরুষ বারবার মেয়েদের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করেছে। এটা এমপাওয়ারমেন্ট নয়। এ যদি এমপাওয়ারমেন্ট হয়, তবে কাস্টিং কাউচ কে বলতে হবে ক্ষমতার আসন। তাই যদি মর্যাদার হত তাহলে পারভিন বাবি থেকে শুরু করে কঙ্গনা রানাওয়াত রা কেঁদে কেঁদে অভিযোগ করতেন না।শেক্সপিয়ার ডার্ক লেডিকে ব্যাড এন্জেল বা ইভিল বলতেন না।রুশো বলেছিলেন কোমলতার ছলনায় পুরুষকে প্রলুব্ধ করে , তার মিস্ট্রেস হয়ে ওঠাই নারীর কাজ। এটা ভুল প্রমান করতে উওলস্টোনক্রাফ্ট একা অতদিন আগে লড়ে গেলেন। যৌনতাকে হাতিয়ার করা মেয়েদের আন্দোলনকে দুশো বছর পিছিয়ে দেবে।

পুরুষের যৌনতা ও মেয়েদের যৌনতার ধরন আলাদা।এই বেসিক জায়গাটা মানতে হবে।মেয়েদের যৌনতা র সঙ্গে মেনস্ট্রুয়েশন, মাতৃত্ব, মেনোপজ জড়িত। এমনকি মেনোনজের পর যে যৌনতা অন্তর্হিত হয় না, তাও এখন প্রমানিত। জন্ম নিয়ন্ত্রণ আসার পরে মেয়েদের বডি কন্ট্রোল এসেছে। কিন্তু তাও সার্বিক নয়। এ প্রসঙ্গে বোভ্যায়া একটা মারাত্মক সত্যি কথা বলেছেন

“In coition, man uses only an external organ , while woman is stuck deep within her vitals”. এটা বড় অনিবার্য সত্যি। শরীর বাইরে এবং অভ্যন্তরে।আরেকটা কথাও জরুরী ।কেন ধর্ষণ বা অনভিপ্রেত সঙ্গম মেয়েদের কাবু করে ফেলে? ” Woman, once penetrated ….feels trespassed in upon her flesh.”

নিজস্ব, আভ্যন্তরীণ শারীরিকতার কারনেই মেয়েদের শুচিবোধ সংক্রান্ত নিয়মগুলো এসেছে । সেই নিয়ম বাদ দিলেও, হাইজিন ও হরমোনের কারনে মেয়েদের যৌনতা, মেয়েদেরই। তার একটা নির্মাণ আছে।সেটা পুরুষের চেয়ে ভিন্ন। এমপাওয়ারমেন্টের দোহাই দিয়ে তার বিনির্মাণ করা যাবে কি? মেয়েদের অরগ্যাজম, যা কিনা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি সময় সাপেক্ষ ও দীর্ঘকালীন, পাল্টে যাবে? আর শুচিতাবোধ, যা কিনা দৈহিক, মানসিক এবং বৌদ্ধিক ও বটে সেটা মেয়েদের একচেটিয়া সম্পত্তি নয়।পুরুষের মধ্যেও সেই বোধ থাকার কথা। বাস্তবে আছে কি নেই সেটা ব্যক্তিসাপেক্ষে প্রযোজ্য ।তবে থাকলেই ভালো।

বহুকাল আগে উওলস্টোনক্রাফ্ট নারীবাদের নাম ও জানতেন না।কিন্তু যৌনতাকে হাতিয়ার করে প্রতিষ্ঠিত হবার (?) পন্থকে বর্জন করার লড়াই শুরু করেছিলেন।

যৌন আকর্ষণ ক্ষণস্থায়ী । পারস্পরিক শ্রদ্ধা ছাড়া সম্পর্ক টেঁকে না।কাজ ও সম্মানিত হয় না। অন্যান্য সব শারীরবৃত্তীয় কাজের মতো যৌনতা ও পবিত্র । তার মর্যাদা থাকবে না? ইন্দ্রাণী বোরা( মুখার্জি) যৌনতা হাতিয়ার করে বেশ একটা জায়গা করেছিলেন বটে। অনেকেই করেন। অনেকেই করে থাকেন অথচ চুপেচাপে।কেন পাব্লিকলি বলেন না?সমাজের ভয়? তাহলে আর এমপাওয়ারমেন্ট কি হল? ইমরান খান বুক বাজিয়ে বলে গেছিলেন ” All Indian film stars are prostitutes”. কেউ তো কিছু প্রতিবাদ করলো না? শরীর ব্যবহার যদি ক্ষমতা দিত , তাহলে সামাজিক স্বীকৃতি ও দিত।যৌনক্ষমতা ব্যবহার করে পাটরাণী হয়ে ওঠা মহিষীরা চিরকাল সময় ফুরোলে দুয়োরানি হয়ে চোখের জল ফেলতেন, আজ ও ফেলেন।

এটা শরীরকে হ্যাটা করা হচ্ছে না। আবার শরীর নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করার ও কোনো যুক্তি নেই।

যৌনতা এমপাওয়ারমেন্টের অস্ত্র বা বন্দুক হলে নারীবাদ জন্মাতো না। দেবদাসী বা নগরনটীরা এমপাওয়ারড ছিলেন না।বা ততটুকুই ছিলেন যতটা সমাজপিতারা অনুমোদন করতেন। তারপর তাঁরা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতেন বই নয়। শরীর ব্যবহার করে এমপাওয়ারমেন্ট দেখিয়েছেন মণিপুরের মেয়েরা।অথবা মহাশ্বেতার দ্রৌপদী। যেখানে কাউন্টার অ্যাটাক হচ্ছে।শোষক থমকে যাচ্ছে।

কাজ কাজের জায়গায় থাকুক।যৌনতা থাক তার নিজস্ব জায়গায়। তাতে দুইই মর্যাদা পাবে। এমপাওয়ারমেন্ট

নারীবাদের বহুস্বর এবং বহুস্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত । যৌনতার অস্ত্র দিয়ে তাকে পাওয়া যাবে না।আবার এমপাওয়ারমেন্টের সঙ্গে হায়াররার্কি ও চলে আসে। সেখানে মালকিন- কাজের মাসি , শিল্পপতি – শ্রমিক, বিগ হাউস লেখক- লিটল ম্যাগাজিনের লেখক এসব আলোচনাও ওঠে। অনেক অনেক জটিলতা। যৌনতা নিজেই একটা জটিল বিষয় । তাকে হাতিয়ার করে জটিলতা বৃদ্ধি বই কিছু হবে না।তাতে নারী আন্দোলনের বিস্তর ক্ষতি ।

দুটি মতামতই হুবহু পেশ করলাম। এবার ভাবনার ও বেছে নেবার কাজ পাঠকের। 

দুটিই ফেসবুক পোস্ট এবং বহু পঠিত।

তবে আমার হেলে থাকা  অনুরাধার দিকে। সবিতাভাবি উত্তেজক হতে পারে, নারীর “অন্যরকম” মডেল হতে পারে, কিন্তু তা পর্নোগ্রাফিই মাত্র। পর্ন চরিত্র যা পুরুষ ফ্যান্টাসিকে খাদ্য জোগায় তা নারীকে মুক্তি দিতে আসেনি, নারীর মুক্তির প্রশ্নটা একেবারেই অন্য কোথাও, অন্য কোনখানে।

অন্য দিকে, পর্ন ব্যান করা অনুচিত সেটা এই কারণেই , যে, যে কোন  পর্ন ব্যানের মতই এক্ষেত্রেও নিষিদ্ধকরণ দিয়ে শুধু যৌনতার ওপর পেষণ নামিয়ে আনাই সম্ভব হবে,  আপত্তিকর ডিনায়ালের সংস্কৃতিকেই বহাল রাখা হবে। জনগণকে পরিণত বুদ্ধির বা পরিণত মানসিকতার ভাবার বিরোধী। প্রাপ্তবয়স্ক জনগণকে প্রাপ্তবয়স্ক ভাবার বিরোধী।

তবে শেষ কথা কিন্তু এটাই,  যে, 

“যৌনতা এমপাওয়ারমেন্টের অস্ত্র বা বন্দুক হলে নারীবাদ জন্মাতো না। দেবদাসী বা নগরনটীরা এমপাওয়ারড ছিলেন না।বা ততটুকুই ছিলেন যতটা সমাজপিতারা অনুমোদন করতেন। তারপর তাঁরা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতেন বই নয়। শরীর ব্যবহার করে এমপাওয়ারমেন্ট দেখিয়েছেন মণিপুরের মেয়েরা।অথবা মহাশ্বেতার দ্রৌপদী। যেখানে কাউন্টার অ্যাটাক হচ্ছে।শোষক থমকে যাচ্ছে।

কাজ কাজের জায়গায় থাকুক।যৌনতা থাক তার নিজস্ব জায়গায়। তাতে দুইই মর্যাদা পাবে।”