বিজয়া মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

তর্জনীকে দাঁড় করিয়ে রাখেন যে কবি

যশোধরা রায়চৌধুরী

তুমি ভাব/ আমি তোমার/ আজ্ঞাবহ দাস/ জলের মতো দেখো/ নানাপাত্রে রাখো/ জালা কুঁজোয় গ্লাস ঘটিতে/ এই আমাকে, আমায় নিয়ে/ প্রভু তুমি কী প্রসন্ন/ আত্মতুষ্ট প্রভু/ ভাব তোমার পদপ্রান্তে/ সেবাধন্য দাস/ একচক্ষু সুখের পাখি/ আমার মূর্খ প্রভু। (তুমি ভাবো)

আমার প্রভুর জন্য নামে প্রথম কাব্যগ্রন্থের এই বিস্ফোরক লেখাটি একেবারেই বিজয়া মুখোপাধ্যায়ের হস্তচিহ্ন ধারণ করে আছে। এক আশ্চর্য নিচুকন্ঠে বলা , শান্ত উচ্চারণে ধরা আছে বিস্ফোরণটি। 

বিজয়া মুখোপাধ্যায়ের কবিতা আগে যেভাবে পড়েছি,  তাঁর চলে যাবার পর সেই পড়াটা বেশ কিছুটা পাল্টে গেছে এ কথা মানতে দ্বিধা নেই। এক কবিকে বুঝতে গেলে হয়ত , দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করতেই হয়, তাঁর মরদেহের অবসান অব্দিই অপেক্ষা করতে হয়। এটাই কবির ভবিতব্য।

আপাতত  তাঁর কবিতাসংগ্রহ,  শ্রেষ্ঠ কবিতা,  এগুলো হাতে নিয়ে পরপর তাঁর প্রতি বই ধরে ধরে পড়ছি। শুরু থেকে তার চলন দেখছি।  ভ্রমণ দেখছি।

আর সেই ভ্রমণে বিজয়া মুখোপাধ্যায় খুবই অপ্রত্যাশিত চমক উপহার দেন। তাঁর এক এক লেখা এক এক রকম, কোন এক মাপের এক মেটে  ঢং তাঁর লেখা থেকে  পাইনা, আর তাই অস্বস্তির সঙ্গে সঙ্গে বিস্ময় আসে।

ঠিক কী লিখতেন বিজয়া মুখোপাধ্যায়? আমরা যারা বাংলা কবিতার মোটাদাগের পাঠক, যে কোন পাঠের  কবিতাকে আমরা লেবেল এঁটে দিতে চাই, বিষয়  নামক একটা অসার জিনিস,  আমরা নানাভাবে ভাগ করি।  একটা ভাগ হয় বিষয়ভিত্তিক।  যেমন বর্ষার কবিতা,  গ্রীষ্মের কবিতা এইরকম  মোটা মোটা ভাগ।  আরেকটা ভাগ হয় থিমের, দর্শনের ভাগ।  পেছনের ভাবনার বিভাগ।  থিম শব্দটা  শুনলেই আজকাল থিমের পুজো এসে পড়ে । কিন্তু আমি ঠিক যা  বলতে চাইছি তা হল, ভাবনার ধরণ বা ঝোঁক বা প্রবণতা দিয়ে ভাগ করা। কোন কোন কবির প্রিয় বিষয় মৃত্যুচেতনা, কারোর প্রেম বা যৌনতা।  বিজয়ার কবিতা যদি আমরা খুব মন দিয়ে দেখি দেখব , তিনি এভাবে কোন চেনা ঝোঁকের হাতে ধরাই দেন না।

তারপর অনেক পড়তে পড়তে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাঁর চিন্তা প্রক্রিয়াটাকেই যেন  তিনি কবিতা আকারে লিখে রাখতেন। আর সেই চিন্তাপ্রক্রিয়ার অনেকটা ঘিরে থাকে লেখালেখি।  বিষয় বা থিম বলতে আসছে  তাঁর মুহূর্তিক ভাবনারাজি। তাই  সেখানে এসে পড়ছে মেজাজের নানান রঙের ছবি । তার মধ্যে আবার অনেকটাই লেখা নিয়ে তাঁর ভাবনার কথাও।

বিজয়া

কখনো কখনো রাগ ক্ষোভ আনন্দ দুশ্চিন্তা, কখনো কেবল একটি দেখা, কারুকে, তা মানুষ বা মানুষীও হতে পারে। আবার তা কোন দৃশ্যও হতেই পারে। এইসব দর্শন,  এইসব চিন্তা  কবিতায় থিম  হয়ে আসছে।  আমি বার বার লক্ষ্য করছি যে তাঁর কবিতাগুলো  আমরা “একজন নারীর কবিতা” “নারীবাদী কবিতা” এইসব তকমায় ফেলতে কখনোই পারছি না। সেসব লেবেল দিতে গিয়ে  ব্যর্থ হচ্ছি। এমনকি সামাজিক সচেতনতার কবিতা বলতেও ব্য র্থ হচ্ছি।

 অথচ অনেকগুলি কবিতাই এমন যে  নারীবাদী কবিতা সংকলন করতে গেলে যায় তাতে রাখতে হয় । যেমন পুঁটিকে সাজে না। কবিতাটি একদা ব্যবহার করেছিলাম এক উত্তর সম্পাদকীয়ের মুখবন্ধে, যার অভিমুখ ছিল নারী।

আবার , যেমন এই কবিতাটি।  পড়লে মনে হয়, কেন এমন অদ্ভুত কথা ভাবব আমরা, যে, নারীত্ব –পুরুষত্ব-নির্বিশেষ একটি “বাদ” বা ইজম ছাড়া নারীবাদ আর কিছুই নয়? যে তত্ত্বে স্থিরবিশ্বাস রেখে একের পর এক প্রতিবাদ ছুঁড়ে দিতে হয়, স্লোগান লিখতে হয় ক্রমাগত , তবেই একমাত্র খবরের কাগজের হেডিং-এর মত করে লেখা হয়ে উঠবে নারীবাদী কবিতা? এমন অতিসরলীকৃত না ভেবে, বরং, পোস্ট মডার্ন বা অধুনান্তিক তত্ত্ব থেকে নারীবাদ বিষয়ে একটা কথা ধার নেব এখানে।  অন্যভাবে দেখানোর ফলে দেখার সুবিধে করে দেবে বলে।

“জীবের সঙ্গে জীব মিলে মিশে যে ডাঙায় জীবনের যৌথতা চালায় সেই চলাচলের ক্ষেত্রই ‘অঞ্চল’। আলাদা এক খন্ড ভিটেমাটি বলে সে ডাঙাকে যদি চাক্ষুষ চেনা না যায়, তাহলেও। যে কোন অঞ্চলেরই ন্যূনতম একটা আত্মশক্তি চিহ্নিত সার্বভৌমতার দরকার থাকে।

যেমন ধরুন নারীবাদ যে সম্ভব হচ্ছে তার কারণ, মেয়েরা এই অর্থে একটা অঞ্চল। তাঁরা যে আলাদা কোনো ভূখন্ডে থাকেন না, পুরুষদের সঙ্গে এক বারিতে এক পাড়ায় এক দেশেই থাকেন, সেটা নারী অঞ্চলের সংহতির অন্তরায় নয়। নারী অঞ্চলের স্বাতন্ত্র্য চাওয়া মানে ছেলেদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো ভূমিতে থাকতে চাওয়ার অলীক কল্পনা নয়। মেয়েদের স্বাভাবিক স্বপ্নের পুরোন দাবিরই পরিস্ফুট রূপ। যে পরিস্ফুটনের ধরণটা অধুনান্তিক পর্বের আঞ্চলিকতার লক্ষণে চিহ্নিত। “ (প্রবাল দাশগুপ্তের “অধুনান্তিক এলাকা” প্রবন্ধ থেকে)

আমার মতে, সমস্ত কবিতাই আসলে মানুষেরি কবিতা, একইসঙ্গে  ঘটনাক্রমে মেয়েলিখিত হলে, সেই কবিতার একেবারে ভেতরে থেকে যায় , হঠাত হঠাত জেগে ওঠে এমন এমন সব মেয়েমানুষের কথা, মানুষ হিসেবে অস্বীকৃত হয়ে অপমানিত বিক্ষুব্ধ মেয়ের মনের কথা, এমন সব সত্য হঠাৎ করে ভেসে ওঠে কবিতার মধ্যে, যে আমরা স্তম্ভিত হই, স্পৃষ্ট হই, ঋদ্ধ হই। ঠিক যেভাবে এক পুরুষ কবির কলম অনবরতই লিখে চলে পুরুষজমিন, এক নারী লেখেন নারী অঞ্চলের কথাই, সে অঞ্চল বাত্যাবিক্ষুব্ধ হোক বা শান্ত, সেই ভূগোলটার খবর আমরা পেতে পারি তাঁর লেখায়, নিরবচ্ছিন্নভাবে, যদি না তিনি সচেতনে অন্য লিঙ্গের বাচনে কিছু বলতে চান।

আসলে এই সময়ে, আমাদের এই গড়পড়তা নারীত্ব কখনো কোন বাদের ঝান্ডা নিয়ে দাঁড়ায়না। আবহমান মানুষের কথা বলে। যে মানুষের পরাজয় হয়ত নারীর পরাজয়, হয়ত মানুষের পরাজয়।

মা আর মেয়ে গান গাইছে, ‘আমারে কে নিবি

ভাই, সঁপিতে চাই – ‘

অন্ধকার কেউ কারুর মুখ দেখতে পায় না গলার সুর, কথার ছন্দ মিশে যায় গানে কার

মনের ভেতরে কী ছবি জাগেকেউ জানে না

শুধু গেয়ে চলেসঁপিতে চাই  আপনারে

মা আর মেয়ে দিনের আলোয় ওরা

কেউ কারুকে দুচক্ষে দেখতে পারে না রাগে ওদের

গা জ্বলে যায় চিৎকারে পাড়া মাত

বাপের বাড়ি বেড়াতে এসে মেয়ের এত কীসের

নালিশ, মায়ের এত কীসের বিবাদ–  আমি

ভাবি অথচ ঝাঁপ দিয়ে যখন অন্ধকার নামে

সব খোঁচাগুলি একাকার করে দেয়, তখনই ওদের

গলায় জড়ো হয় সুর কোমল ধৈবতে গান্ধারে

ওঠানামা করে সে, কড়িমধ্যম ছুঁয়ে জলের

আওয়াজ তুলে খেলে যায়

পুরুষহীন বাড়ির জানলার পাশে বসে

গান গেয়ে যায় দুই নারী কোমল হয়ে আসে

ব্যক্তিতা ওরা আর মামেয়ে থাকে না,

তখন দুই পরাজিত মানুষী, আবহমান বন্ধু

( ওরা, ভাষায় যেটুকু বলা যায় (২০০৫) গ্রন্থ থেকে)

“আমি শুধু অক্ষরের দানা তোমার পায়ের সামনে রেখে আসি যদি লাগে কাজে পুঁথি পড়া কাজে”।

কিন্তু তবু লোভ সম্বরণ করতেই হয়। শুধুই  নারীবাদী কবিতা বলে দাগিয়ে দেওয়া অন্তত মুখোপাধ্যায়ের কবিতাকে খুব কঠিন ।  প্রথম বই থেকেই এই ধরণের অসংখ্য কবিতার কথা  বলা যায় যার কেন্দ্রে আছে একজন নারী। কিন্তু  কবিতাটি কে যেন নারীবাদী কবিতার ভেতরে ঠিকঠাক ফেলা যায় না । মনীষাকে কবিতাটি যেমন আশ্চর্য এক লেখা। ‘ক্লান্ত শরীর’  ‘ অগাধ জলের আমন্ত্রণ’  আর এইসবের পরে আসছে দুজন প্রেমিকের কথা যাদের ভেতরে আছে  ঠান্ডা লড়াই। একেবারে শেষে আছে, এক জন প্রতিস্পর্ধীর গল্প, আর   ” কেননা তোমার সেই প্রতিস্পর্ধী মারা গেছে কাল কোন এক প্রসূতি ভবনে “এই দিয়ে কবিতা শেষ হচ্ছে।

একটা কবিতা সেখানে বলছেন “আমি ক্রন্দনহন্তারক পুত্র চাই।” তারপরে ঈশ্বর হাসলেন এবং তাঁর নিরুপায় চোখ থেকে বিশাল অশ্রু ঝরে পড়ল।

 এই কবিতা কে আপনি কি বলবেন এই কবিতা আশ্চর্য কবিতা, এবং বিশুদ্ধ কবিতাও বটে।

বিজয়া মুখোপাধ্যায় মূলত মগজ এর কবি, ভাষার কবি,   ভাষা সচেতনতার কবি । তাই তাঁকে বিষয়ের ভেতরেই এসে পড়ছে ভাষা, ভাষা নিয়ে কথা। মেটা ল্যাংগুয়েজের কথা এসে পড়ছে। বিষয় দিয়ে তাঁকে যদি  ধরতে নাও পারি , ভাবনার থিম দিয়ে ধরতে পারি । থিম যেগুলো বারবার ঘুরে আসছে।  বিজয়ার সবচেয়ে প্রিয়  বোধ হয় লেখা বিষয়ক, বা কবিতা বিষয়ক কবিতা অর্থাৎ কবিতা লেখার প্রসেস কে নিয়ে লেখা কবিতা।

“কিছু শব্দ অতিকষ্টে শিখেছি শৈশবে/ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তারই নিপুণ বিন্যাস/ করি, দাবি করি উচ্ছ্বসিত আহা – মরি।” ( অঙ্গীকার করো অন্ধকার)

সম্পত্তি কী নিয়ে লিখছ, বল কবিতার কী বিষয়?

-“বাংলাদেশ, শরণার্থী, সবুজের অভিযাত্রিত্রয়।’

যখন বিন্যস্ত হবে তোমার এই সাম্প্রতিকতার

ঢেউগুলি, কী হবে তখন?

  • ‘সেজন্যে তো রাখা আছে প্রকৃতির নাম ব্যবহার

গাছপালা, নদীপথ কিংবা ধর জীবন যৌবন।’

( কবিতাবার্ষিকী)

 একটি লেখা আছে “কবিতা কীভাবে হয়”  যা আমার কথাকে কিছুটা সমর্থন জোগাবে।

 ‘কবিতা কীভাবে হয়/ নিছক কবিতা/ চেহারায়, ছন্দে , অবস্থানে/ শব্দে পিরামিড কর, অথবা মন্দির, তার মানে/ একটি একটি শব্দ প্রতি লাইনে বেশি দাও/ ঋজুদেহ অথবা কৌণিক শব্দ ভেঙে অক্ষর বসাও পর পর / পংক্তি বাড়ে, – দীর্ঘকাব্যে চাই পরিসর। /…

কি বিষয় কবিতার প্রিয়?/ কিছুই অচ্ছুত নয় জেনেছ  যদিও/ তবু তবু –  স্বীকারোক্তি,  জীবন যন্ত্রণা ?…আত্মরতি অনন্বয়,  অথবা যৌনতা অথবা কবিতা কিছু বস্তু- অভিজ্ঞতা?”

এই কবিতাটি আছে “ভেঙে যায় অনন্ত বাদাম” এই বইটিতে।  “ভাষায় যেটুকু বলা যায় ” বইটির নামটিই ত এই মেটা ল্যাংগুয়েজ করে ফেলেছে। এর ভেতরেও এমন বেশ কিছু কবিতা বিষয়ক কবিতা আছে, যেমন  ‘লিখতে-লিখতে লিখতে -লিখতে’ প্রথম কবিতার নাম।

যার শেষ লাইন –  “যারা শুধু লিখতেই পারে …আসন ছাড়া, কাগজ ছাড়া,  কলম ছাড়া –  লিখতে- লিখতে লিখতে- লিখতে এক সময়ে শুকিয়ে গিয়ে মরে যায় ।”

আরেকটি কবিতা  “আমরা যারা”।  এই একই গ্রন্থে।

ভাবি, কবি যথার্থ ভিখিরি?  – এই বাক্য দিয়ে শুরু হয় কবিতা। তারপর কবি প্রশ্ন রাখেন –

 পাঠ কাকে প্রতিভা দিয়েছে? /মেধাবীকবির জায়গা এ জগতে নেই শোনা যায়।/ কবি হবে হতবুদ্ধি, উদ্ভ্রান্্‌ অদ্ভুত/ সে দেখেনা বর্ণ দৃশ্য – তার কানে গভীর কল্লোল /তার দৃষ্টি জলের পাতালে/ যে ঠান্ডায় লালচক্ষু রুই/ একান্ত গোপনে গর্ত ঢাকে, ভেতরে গর্ভের ডিম।

অন্য কবিতা “মুখচোরা মানুষ”। অত্যন্ত ভাবে এই সিরিজের উল্লেখ্য। কবিকে যথার্থ ভিখিরি অথবা মুখচোরা মানুষ ভাবার এই সচেতন আইডেন্টিফিকেশনে বজয়া অব্য র্থ।  বিজয়া বলেন,

একজন মুখচোরা মানুষ, মধ্যবয়সী। …সমস্ত ঘটনা লক্ষ করে  আর হাঁটে। রাস্তায় প্লাস্টিকবাজার, ইনজকেশন দেওয়া বাহারি ফুল, ধুলোমাখা তেলেভাজা। আর, যেন কত ডেসিবেল শব্দ? এই সব কিছু ফেলতে-ফেলতে সে যখন জলের ধারে পৌঁছয়, তার হাতে থাকে এক রত্তি বিকেল। …’

গোটা লেখাটিই অসামান্য।

বিজয়ার এই আত্মসচেতন, সেলফ রিফ্লেকটিভ, মেটা ল্যাঙ্গুয়েজের কবিতাগুলি অনবদ্য । এক ভাষা পরিচর্যাকারী হিসেবে তাঁকে চিনেছি। আমাদের খুঁতখুঁতে, শব্দ সচেতন বিজয়াদি । কৃত্তিবাস পত্রিকার জন্য তাঁর সাক্ষাতকার নিতে গিয়ে দেখেছি। দেখেছি জেনেছি তাঁর সংস্কৃত ভাষার প্রতি আদর, প্যাশন। আবার আমার কবিতায় ব্যবহৃত হিন্দি বা ইংরেজি শব্দ নিয়ে তাঁর খুঁটিয়ে আলোচনা টেলিফোনে, আপত্তি সহ, সেসব ও দেখেছি।

অক্ষর সাধক বিজয়া মুখোপাধ্যায়ের কবিতায় লেবেল  দেওয়া যায়না। “আমি শুধু অক্ষরের দানা তোমার পায়ের সামনে রেখে আসি যদি লাগে কাজে পুঁথি পড়া কাজে”।

“প্রেম অতিথির মতো/ কখনো ঢুকে পড়ে অল্প হেসে”

তা বলে কি প্রেমের কবিতা লেখেন নি বিজয়া মুখোপাধ্যায়?

অমোঘ, অন্ধকারাচ্ছন্ন, বিষাদে স্নাত। এভাবেই প্রেমের কবিতাকে ভেবেছেন বিজয়া। জীবনানন্দীয় আবহে এই কবিতাগুলি তিনি লিখেছেন, বাংলা কবিতার সেই ধারাবাহিকতায়।

 কবিতাটির নাম হল “সঙ্গী” – আমরা যার সংগে নিত্য বসবাস করি/ তার নাম প্রেম নয়, উদবেগ। / প্রেম অতিথির মতো/ কখনো ঢুকে পড়ে অল্প হেস/সমস্ত বাড়িতে স্মৃতিচিহ্ন ফেলে রেখে / হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। / তারপর সারাক্ষণ/ আমরা কেউ আর উদবেগ/ আমরা একজন আর উদবেগ/ বসবাস করি/ রাত থেকে দিন, দিন থেকে রাত। “

এক আদ্যন্ত সচেতন প্রেম ও অপ্রেমের কবিতা। শহুরে শিক্ষিত কবিতা। জীবনানন্দীয় কবিতাও বটে।  জীবনানন্দের আসল পরিচয় কিন্তু তাঁর ঐ অন্ধকারই।  হেমন্ত বিকেলের ম্লান আলোয় স্নাত। ওই মরবিডিটি… ওই অন্ধকার, ওই করুণ মলিন মোটর… চালিকাশক্তি, যা কবিতার ভেতরে চুম্বক স্থাপন করে, কবিতাটিকে চালায় ত বটেই, পাঠককেই চালায় কবিতাটির দিকে। অমোঘ আকর্ষণে টানে আমাদের।

লেখক ও বিজয়া

Leave a comment